কারেন্ট বিল বের করার সঠিক নিয়মসমূহ

প্রিয় পাঠক, আজ আমরা আপনাদের সাথে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সহভাগিতা করব। আমাদের প্রত্যেকের বাড়িতেই কারেন্ট বা বিদ্যুৎ রয়েছে। প্রতি মাসে আমাদেরকে কারেন্ট বিল দিতে হয়। কোনো মাসে বেশি আবার কোনো মাসে কম। এই কারেন্ট বিল কিভাবে নির্ধারিত হয় তা আমাদের অনেকেরই অজানা।
কারেন্ট-বিল-বের-করার-সঠিক-নিয়মসমূহ
আপনি যদি নিজেই আপনার বাড়ির কারেন্ট বিল বের করতে পারেন তাহলে বিষয়টা কেমন হত? আপনি নিজেই কারেন্ট বিল বের করতে পারলে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন যে আপনার কারেন্ট বিল বেশি আসে নাকি কম আসে। তাহলে চলুন কথা না বাড়িয়ে আলোচনা শুরু করা যাক-

পোস্ট সূচিপত্রঃ কারেন্ট বিল বের করার সঠিক নিয়মসমূহ

কারেন্ট বিল বের করার সঠিক নিয়মসমূহ

কারেন্ট বিল বের করার নিয়মসমূহের মধ্যে আপনাকে জানতে হবে যে কিভাবে কারেন্ট বিল বের করতে হয় এবং এর জন্য কি কি প্রয়োজন হয়? বাংলাদেশে অনেক ধরনের বিদ্যুৎ বিতরণ কেন্দ্র রয়েছে। যেমন- পল্লী বিদ্যুৎ, পিডিবি, নেসকো, ওজোপাডিকো ইত্যাদি। এদের সকলের বিদ্যুৎ বিল নির্ধারণ করার পদ্ধতি একই কিন্তু ইউনিট এর খরচ আলাদা আলাদা হয়ে থাকে। যার জন্য এক কোম্পানির কারেন্ট বিলের সাথে অন্য কোম্পানির কারেন্ট বিলের কিছু পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।
আমরা জানি যে কারেন্ট বিল কিলোওয়াটে প্রকাশ করা হয়। তার মানে এখন আপনাকে জানতে হবে যে কিলোওয়াট কি? কিলোওয়াট বলতে আপনি আপনার বাসায় প্রতি ঘন্টায় যে পরিমাণ বিদ্যুৎ খরচ করছেন তার একককে বোঝায়। অর্থাৎ ১০০০ ওয়াট = ১ কিলোওয়াট। এরকম কিছু ছোট সূত্র আপনাকে জানতে হবে তাহলে আপনি সহজেই আপনার কারেন্ট বিল বের করতে পারবেন। 

কারেন্ট বিল বের করার সূত্র ১

কারেন্ট বিল বের করতে হলে আপনাকে কিছু সূত্র অবলম্বন করতে হবে। সূত্র অনুযায়ী না করলে আপনি আপনার বাড়ির কারেন্ট বিল সঠিকভাবে বের করতে পারবেন না। এজন্য আপনাকে যে সূত্রগুলো জানতে হবে সেগুলো নিচে দেওয়া হলো-
এক কিলোওয়াট = ১০০০ ওয়াট
নেট বিল = এনার্জি বিল + মিটার বিল
অর্থাৎ নেট বিল বের করতে হলে আপনাকে এনার্জি বিল এবং মিটার বিল একত্রে যোগ করতে হবে তাহলে আপনি নেট বিলের পরিমাণ পাবেন। এখন আপনাকে জানতে হবে যে কিভাবে এনার্জি বিল বের করবেন। এনার্জি বিল বের করতে হলে আপনাকে নিচের সূত্র অনুসরণ করতে হবে।
    এনার্জি বিল = এক মাসে ব্যবহৃত ইউনিটের পরিমাণ (KWH) × প্রতি ইউনিটের মূল্য 
                            KWH= Kilowatt per hour
প্রতি মাসে আপনার কি পরিমাণ ইউনিট খরচ করছে তা জানতে হবে। এজন্য আপনাকে প্রথমে একদিনে কি পরিমাণ বিদ্যুৎ খরচ হয়েছে সেটি বের করতে হবে। তারপর তাকে চলতি মাসের দিনের সংখ্যা দিয়ে গুন করতে হবে। তাহলে আপনি এক মাসে ব্যবহৃত ইউনিটের পরিমাণ পাবেন।

কারেন্ট বিল বের করার সূত্র ২

আপনি উপরের সূত্র ব্যবহার করে কারেন্ট বিল বের করতে পারেন। আর যদি আপনার অসুবিধা হয় তাহলে আপনি কারেন্ট বিল বের করার সূত্র ২ ব্যবহার করে কারেন্ট বিল সহজেই বের করতে পারবেন। সূত্রটি হলো-
P*T/1000 
এখানে  P = Power/watt এবং T = Time 
অর্থাৎ কোনো ওয়াটকে সময় দ্বারা গুন করে তার গুণফলকে সময় দিয়ে ভাগ করলে যে ফলাফল পাওয়া যাবে সেটিই হলো আপনার কারেন্ট বিল।
এখন আপনাদেরকে একটি উদাহরণ এর মাধ্যমে বোঝানোর চেষ্টা করছি-
মনে করেন আপনার বাড়িতে ৫টি ৪০ ওয়াটের লাইট ৮ ঘন্টা, ৩টি ফ্যান ৬০ ওয়াটের ১৩ ঘন্টা, ১টি টেলিভিশন ৪৫ ওয়াটের ৫ ঘন্টা, ১টি ল্যাপটপ ৫০ ওয়াটের ৯ ঘন্টা, পাম্প মোটর ১টি ১ হর্স পাওয়ারের ২ ঘন্টা করে প্রতিদিন চলে। তাহলে আপনার মাসিক কারেন্ট বিল কত টাকা হতে পারে?
এখানে আপনাকে প্রত্যেকটি সংখ্যাকে গুন করতে হবে। অর্থাৎ আপনার ইলেক্ট্রনিক্স জিনিসের সংখ্যা, ওয়াটের পরিমাণ এবং দিনে কত ঘন্টা করে চলে। এগুলো উপাদান লাগবে যা উপরের প্রশ্নে উল্লেখ করা হয়েছে। তাহলে সেই অনুযায়ী প্রত্যেকটি জিনিসের ওয়াট বের করলে যা দাঁড়াবে তা হলো-
লাইট =৫*৪০*৮ = ৮০০০ ওয়াট
ফ্যান =৩*৬০*১৩ =২৩৪০ ওয়াট
টেলিভিশন = ১*৪৫*৫ = ২২৫ ওয়াট
ল্যাপটপ = ১*৫০*৯ = ৪৫০ ওয়াট
পাম্প মোটর = ১*৭৪৬*২ =১৪৯২ ওয়াট
তাহলে এখন উপরের সকল ওয়াট একত্রে যোগ করলে দাঁড়ায় -
(৮০০০+২৩৪০+২২৫+৪৫০+১৪৯২=১২৫০৭ ওয়াট)
কারেন্ট-বিল-বের-করার-সঠিক-নিয়মসমূহ
এখন এই ওয়াটকে কিলোওয়াটে পরিনত করার জন্য আমাদেরকে ১২৫০৭ ওয়াটকে ১০০০ দিয়ে ভাগ করতে হবে। তাহলে আমরা ইউনিট পাব। তাহলে চলুন এটি বের করে ফেলি-
১২৫০৭/১০০০ = ১২.৫০৭ ইউনিট। 
তার মানে হচ্ছে আপনার বাড়িতে দিনে ১২.৫০৭ ইউনিট খরচ হচ্ছে। এবার ৩০ দিনে কত ইউনিট খরচ হচ্ছে তা বের করতে হবে। তার জন্য ইউনিটকে ৩০ দিয়ে গুন করতে হবে তাহলে এক মাসের ইউনিট পাওয়া যাবে। তাহলে চলুন গুন করে ফেলি-
১২.৫০৭*৩০ =৩৭৫.২১ ইউনিট 
এই ৩৭৫.২১ ইউনিট হচ্ছে আপনার বাড়ির সারা মাসের বিদ্যুৎ বিল। তবে এখনো একটি কাজ বাকি রয়েছে সেটি হলো এই ৩৭৫.২১ ইউনিটকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ রেট দিয়ে গুন করতে হবে। এই রেট বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। আপনাকে আপনার এলাকা থেকে জেনে নিতে হবে যে ১ ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ করলে কত টাকা প্রদান করতে হয়। তাহলেই আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত কারেন্ট বিল বের করতে পারবেন। আমি বর্তমান রেট দিয়ে কারেন্ট বিল বের করে আপনাকে দেখাচ্ছি। এখন বর্তমানে ১ ইউনিট কারেন্ট খরচ করলে তার বিলের পরিমাণ হবে ৮.৯৫ বা ৮ টাকা ৯৫ পয়সা। তাহলে ৩৭৫.২১ ইউনিটের বিদ্যুৎ খরচের পরিমাণ হবে-
৩৭৫.২১*৮.৯৫ =৩৩৫৮.১২৯৫ টাকা। এটিই হলো আপনার কারেন্ট বিলের পরিমাণ। এটি হলো একটি উদাহরনের মাধ্যমে, এখন আমরা দেখব কারেন্ট বিলের বাস্তবিক রুপ। এক্ষেত্রে আপনাকে জানতে হবে যে কোন ইলেক্ট্রনিক্স জিনিষ কত ওয়াট। এটি জানা থাকলে আপনি সহজেই কারেন্ট বিল বের করতে পারবেন। আমরা আপনার সুবিধার্থে একটি ছোট লিস্ট নিচে তুলে ধরছি।
ইলেক্ট্রনিক্সের নাম ওয়াটের পরিমাণ
লাইট ১৫-২০০ ওয়াট
ফ্যান ৫০-৮০ ওয়াট
টেলিভিশন ২৫-১৫০ ওয়াট
ডেস্কটপ কম্পিউটার ৮০-২৫০ ওয়াট
ল্যাপটপ ২০-৬০ ওয়াট
রেফ্রিজারেটর ৮০-২০০ ওয়াট
এসি ১০০০-৩০০০ ওয়াট
আয়রন ৫০০-১০০০ ওয়াট
পাম্প মোটর ১/৮-৩hp

এই লিস্ট ফলো করে আপনি আপনার বাসার কারেন্ট বিল সহজেই বের করতে পারবেন। এখন আমরা দেখব আরেকটি তালিকা যেটির মাধ্যমে আপনি আপনার কারেন্ট বিল বের করতে পারবেন। এই তালিকাতে আপনি দেখতে পাবেন আবাসিক এলাকার জন্য এনার্জি রেট কত। এই রেট দেখে আপনি কারেন্ট বিলের সম্পূর্ণ হিসাব পাবেন।

ধাপ ইউনিট এনার্জি রেট
লাইফ লাইন ০-৫০ ইউনিট ৪.৬৩
প্রথম ধাপ ০-৭৫ ইউনিট ৫.২৬
দ্বিতীয় ধাপ ৭৬-২০০ ইউনিট ৭.২০
তৃতীয় ধাপ ২০০-৩০০ ইউনিট ৭.৫৯
চতুর্থ ধাপ ৩০০-৪০০ ইউনিট ৮.০২
পঞ্চম ধাপ ৪০০-৬০০ ইউনিট ১২.৬৭
ষষ্ঠ ধাপ ৬০০- ইউনিটের উপরে ১৪.৬১

আপনাকে আপনার বাড়ির কারেন্ট বিল বের করতে হলে এটি অনুসরণ করতে হবে। যেমন আমরা উপরে কারেন্ট এর বিল নির্ণয়ের সময় এক মাসে ৩৭৫.২১ ইউনিট বিদ্যুৎ খরচের পরিমাণ পেয়েছি। সেই ইউনিটের বিল বের করতে হলে আপনাকে যা করতে হবে-
৭৫-০= ৭৫ ইউনিট
২০০-৭৬ =১২৪ ইউনিট
৩০০-২০০=১০০ ইউনিট 
৪০০-৩৭৫.২১ = ২৪.৭৯ ইউনিট
সর্বমোট (৭৫+১২৪+১০০+২৪.৭৯= ৩২৩.৭৯ ইউনিট )
এখন আপনাকে উপরের তালিকা দেখে সকল ইউনিটের খরচ বের করতে হবে। 
=৭৫*৪.৬৩ =৩৪৭.২৫ 
=১২৪*৭.২০=৮৯২.৮
=১০০*৭.৫৯= ৭৫৯ 
=২৪.৭৯*৮.০২ =১৯৮.৮১৫৮
সর্বমোট= (৩৪৭.২৫+৮৯২.৮+৭৫৯+১৯৮.৮১৫৮= ২১৯৭.৮৬৫৮) 

আপনার নিজের বাড়ির কারেন্ট বিল বের করবেন কিভাবে?

আপনার নিজের বাড়ির কারেন্ট বিল বের করবেন কিভাবে সেটি আপনাদের সাথে সুন্দর ভাবে শেয়ার করব। আপনি এই আর্টিকেলটি সুন্দর ভাবে পড়বেন তাহলে আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন এবং আপনার বাড়ির কারেন্ট বিল বের করতে পারবেন। বাড়ির কারেন্ট বিল বের করতে হলে আপনি এই নিয়মটিই অনুসরন করবেন। এই নিয়মটি তুলনামূলক ভাবে অনেক সহজ। চলুন তাহলে শুরু করা যাক-
মনে করুন আপনার বাড়িতে ৪টি লাইট আছে যেটি ২০ ওয়াটের এবং সেটি প্রতিদিন গড়ে ৮ ঘন্টা করে জ্বলে। ফ্যান আছে ২টি যেটি ৫০ ওয়াটের এবং সেগুলো প্রতিদিন ৯ ঘন্টা করে চলে। ঠিক একইভাবে ল্যাপটপ ১টি আছে ৩০ ওয়াটের যা প্রতিদিন ১০ ঘন্টা করে চলে। পাম্প মোটর ১/৮এইচ পি প্রায় ২ ঘন্টা করে প্রতিদিন চলে। টেলিভিশন আছে ১টি ৫০ ওয়াটের যেটি প্রতিদিন ৬ ঘন্টা করে চলে। তাহলে আপনার বাড়ির কারেন্ট বিল কত হতে পারে?

ওয়াট আওয়ার কিভাবে বের করবেন?

ধাপ১ঃ আপনাকে প্রথমে ওয়াট আওয়ার বের করতে হবে। এর জন্য আপনাকে Watt = P*T/1000 এই সূত্রটি প্রয়োগ করতে হবে। আমরা পূর্বেই বলেছি যে P = পাওয়ার/ওয়াট এবং T = টাইম। তাহলে চলুন ওয়াট আওয়ার বের করে ফেলি-
-লাইট আছে ৪ টি প্রত্যেকটি ২০ ওয়াটের অর্থাৎ (২০*৪)= ৮০ ওয়াট এবং প্রতিদিন ৮ ঘন্টা করে জ্বলে। তাহলে লাইটের ওয়াট আওয়ার হবে-
              P = ৮০ ওয়াট এবং T = ৮ ঘন্টা 
            তাহলে আমরা জানি W=P*T
                                                    =৮০*৮
                                                    =৬৪০ ওয়াট আওয়ার  (এটা এক দিনের ওয়াট আওয়ার)
অতএব ১ মাসের ওয়াট আওয়ার (৬৪০ ওয়াট*৩০ দিন) = ১৯২০০ ওয়াট আওয়ার

-ফ্যান আছে ২টি প্রত্যেকটি ৫০ ওয়াটের অর্থাৎ (৫০*২)= ১০০ ওয়াট এবং প্রতিদিন ৯ ঘন্টা করে চলে। তাহলে ফ্যানের ওয়াট আওয়ার হবে-
                        P = ১০০ ওয়াট এবং T= ৯ ঘন্টা 
                     আমরা জানি W= P*T
                                                =১০০*৯
                                                =৯০০ ওয়াট আওয়ার (এটা এক দিনের ওয়াট আওয়ার)
অতএব ১ মাসের ওয়াট আওয়ার (৯০০*৩০) = ২৭০০০ ওয়াট আওয়ার 

-ল্যাপটপ আছে ১টি ৩০ ওয়াটের অর্থাৎ (৩০*১) =৩০ ওয়াট এবং প্রতিদিন ১০ ঘন্টা করে চলে। তাহলে ল্যাপটপের ওয়াট হবে-
                                        P = ৩০ ওয়াট এবং T = ১০ ঘন্টা
                                  আমরা জানি W=P*T
                                                            =৩০*১০
                                                            =৩০০ ওয়াট আওয়ার (এটা এক দিনের ওয়াট আওয়ার)
অতএব এক মাসের ওয়াট আওয়ার হবে (৩০০*৩০) = ৯০০০ ওয়াট আওয়ার।

-পাম্প মোটর আছে ১টি ১/৮ হর্স পাওয়ারের যেটি প্রতিদিন ২ ঘন্টা করে চলে। তাহলে পাম্প মোটরের ওয়াট হবে-
                    P=৭৪৬ ওয়াট (১ হর্স পাওয়ার = ৭৪৬ কিলওয়াট) এবং  T = ২ ঘন্টা 
           আমরা জানি W=P*T
                                    =(১/৮)*৭৪৬*২
                                    =০.১২৫*৭৪৬*২
                                    =১৮৬.৫ ওয়াট (এটা এক দিনের ওয়াট আওয়ার)
অতএব এক মাসের ওয়াট আওয়ার হবে (১৮৬.৫*৩০) = ৫৫৯৫ ওয়াট আওয়ার।

-টেলিভিশন আছে ১টি যেটি ৫০ ওয়াটের প্রতিদিন ৬ ঘন্টা করে চলে। তাহলে টেলিভিশনের ওয়াট আওয়ার হবে-
                        P = ৫০ ওয়াট আওয়ার এবং T = ৬ ঘন্টা
            আমরা জানি W=P*T
                                    =৫০*৬
                                    =৩০০ ওয়াট আওয়ার (এটি এক দিনের ওয়াট আওয়ার)
অতএব এক মাসের ওয়াট আওয়ার হবে (৩০০*৩০) = ৯০০০ ওয়াট আওয়ার।

ওয়াট আওয়ার থেকে কিভাবে ইউনিট বের করবেন?

ধাপ ২ঃ আপনার বাড়িতে থাকা সকল ইলেক্ট্রনিক্স জিনিসের ওয়াট আওয়ার বের করা হলে এবার আপনাকে প্রত্যেকটা ইলেক্ট্রনিক্স জিনিসের ওয়াট আওয়ার থেকে ইউনিট বের করতে হবে। এর জন্য আপনাকে শুধু মাত্র প্রাপ্ত ওয়াট আওয়ারকে ১০০০ দিয়ে ভাগ করতে হবে তাহলে আপনি সহজেই প্রত্যেকটি জিনিসের ইউনিট পেয়ে যাবেন। চলুন প্রত্যেকটি জিনিসের ইউনিট বের করে ফেলি-
লাইটের ওয়াট আওয়ার = ১৯২০০/১০০০ =১৯.২ ইউনিট
ফ্যানের ওয়াট আওয়ার =২৭০০০/১০০০= ২৭ ইউনিট
ল্যাপটপের ওয়াট আওয়ার =৯০০০/১০০০=৯ ইউনিট
পাম্প মোটরের ওয়াট আওয়ার =৫৫৯৫/১০০০= ৫.৫৯৫ ইউনিট
টেলিভিশনের ওয়াট আওয়ার =৯০০০/১০০০=৯ ইউনিট

কিভাবে ইউনিটকে ব্যবহার করে কারেন্ট বিল বের করবেন?

ধাপ ৩ঃ আপনার সকল ইলেক্ট্রনিক্স জিনিসের ইউনিট বের করা হয়ে গেলে আপনাকে প্রতি ইউনিটের খরচ কত সেটি জানতে হবে। এটি না জানলে আপনি আপনার বাড়ির কারেন্ট বিল বের করতে পারবেন না। এটি কোথায় জানতে পারবেন এই প্রশ্নটি আপনার মনে আস্তে পারে। এটি দেখার জন্য আপনাকে বিদ্যুৎ বিতরণ কেন্দ্রের ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখতে হবে। আপনাদের সুবিধার্থে আমরা উপরে সুন্দর করে টেবিলের মাধ্যমে উপস্থাপন করেছি। আপনি যদি আপনার বাসা বাদ দিয়ে অফিস, কোনো প্রতিষ্ঠান বা অন্যান্য স্থানের কারেন্ট বিল বের করতে চান তাহলে আপনাকে বিদ্যুৎ বিতরণ কেন্দ্রের ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখতে হবে। আমি শুধুমাত্র আবাসিক এলাকার রেটটি আপনাদের সাথে সহভাগিতা করলাম। সম্পূর্ণ কারেন্ট বিল বের করতে হলে আপনাকে সমস্ত ইউনিট যোগ করে নিতে হবে। তাহলে চলুন আমরা সকল ইউনিট বের করে ফেলি-
লাইট+ফ্যান+ল্যাপটপ+পাম্প মোটর+টেলিভিশন =(১৯.২+২৭+৯+৫.৫৯৫+৯) =৬৯.৭৯৫ ইউনিট। আপনাকে দুই নম্বর টেবিল অনুসরন করে কারেন্ট বিল বের করতে হবে।  দুই নম্বর টেবিল দেওয়া আছে যে ০ থেকে ৭৫ ইউনিট পর্যন্ত কারেন্ট খরচ হলে তার পরিমাণ ৫ টাকা ২৬ পয়সা। অতএব মোট কারেন্ট বিলের পরিমাণ হবে (৭৫-৬৯.৭৯৫= ৫.২০৫*৫.২৬=২৭.৩৭৮৩ বা ২৭ টাকা ৩৮ পয়সা)।
এখানে কারেন্ট বিল কম আসার কারণ হলো এখানে কম ইলেক্ট্রনিক্স জিনিস এবং কম ওয়াট ব্যবহার করে কারেন্ট বিল বের করে দেখান হলো। আপনি ঠিক একই নিয়মে আপনার বাড়ির কারেন্ট বিল বের করতে পারবেন। একবারে শুরু থেকে প্রত্যেকটা ধাপ অনুসরণ করে কারেন্ট বিল বের করবেন তাহলে দেখবেন আপনি সহজেই নির্ভুল ভাবে আপনার বাড়ির কারেন্ট বিল বের করতে পারবেন। 
কারেন্ট-বিল-বের-করার-সঠিক-নিয়মসমূহ
এখন মনে করেন আপনার কারেন্ট ইউনিট সারা মাসে মোট ৩৬৫ ইউনিট খরচ হলো। তাহলে আপনি কিভাবে কারেন্ট বিল নির্ধারণ করবেন? চলুন সেটি আপনাদেরকে দেখায়। এর জন্য আপনাকে প্রত্যেকটি ইউনিটের জন্য আলাদা আলাদা করে খরচ বের করে সব যোগ করতে হবে তাহলে আপনি মোট কারেন্ট বিলের পরিমাণ পাবেন। যেমন শুরুতে আছে (০-৭৫) অর্থাৎ আপনাকে বড় সংখ্যা থেকে ছোট সংখ্যাকে বাদ দিতে হবে। তাহলে আপনি পাবেন (৭৫-০)= ৭৫ ইউনিট। এই ৭৫ ইউনিটকে ৫.২৬ দিয়ে গুন করতে হবে। তাহলে (৭৫*৫.২৬)= ৩৯৪.৫ টাকা। আবার একই ভাবে পরের ধাপে দেওয়া আছে (৭৬-২০০ ইউনিট)। এখানেও আপনাকে বড় সংখ্যা থেকে ছোট সংখ্যা বাদ দিতে হবে তাহলে পাবেন (২০০-৭৬) = ১২৪ ইউনিট। এটাকে ইউনিট খরচ দিয়ে গুন করলেই আপনি এর দাম পেয়ে যাবেন। (১২৪*৭.২০)= ৮৯২.৮ টাকা। পরের ধাপে (৩০০-২০১)= ৯৯ ইউনিট, (৯৯*৭.৫৯)=৭৫১.৪১ টাকা। পরের ধাপে (৪০০-৩৬৫) =৩৫ ইউনিট, (৩৫*৮.০২) =২৮০.৭ টাকা। এখন সকল টাকার যোগফল বের করতে হবে। (৩৯৪.৫+৮৯২.৮+৭৫১.৪১+২৮০.৭) =২৩২৩.৪১ টাকা। সুতরাং বুঝতেই পারছেন যে আপনার বাড়িতে যদি মাসে ৩৬৫ ইউনিট কারেন্ট খরচ হয় তাহলে মাস শেষে আপনার এই ২৩২৩.৪১ টাকা কারেন্ট বিল আসবে। আশা করি বুঝতে পেরেছেন।

কারেন্ট বিলের সাথে আরও কি কি খরচ যুক্ত হয়?

আপনার কারেন্ট বিলের সাথে আরো কিছু আনুসাঙ্গিক খরচ যুক্ত হয়। আপনার কারেন্ট বিলের সাথে আরো ৫% ভ্যাট যুক্ত হবে। ডিমান্ড চার্জ, মিটার ভাড়া, বিলম্ব ফি, বিল প্রসেসিং ফি সহ আরো অনেক কিছুর খরচ যুক্ত করা হয়। এই সব খরচ মিলিয়ে আপনার এক মাসের কারেন্ট বিল নির্ধারণ করে থাকে। এজন্য তুলনামূলক বিল বেশি আসে। 
এগুলো খরচ প্রত্যেকেই বহন করতে হয়। এই খরচ গুলো তারা এমন ভাবে যুক্ত করে দেয় যেন প্রত্যেকেই তাদের বিল প্রদানের সময় এই সমস্ত ফি প্রদান করে। এই জন্য বিলের মধ্যে এই সমস্ত আনুসাঙ্গিক খরচ অন্তর্ভুক্ত করে রাখে।

বিদ্যুৎ বিল কিভাবে কমানো যায়?

আমরা অনেকেই চিন্তা করি যে আমাদের এত টাকা কেন বিল আসে? কি উপায় অবলম্বন করলে আমরা কারেন্ট বিল কমাতে পারব। আসলে কারেন্ট বিল কমানোর জন্য আমাদেরকে কিছু বিষয় সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। যেমন- সবসময় লাইট, ফ্যান অযথা চালানো যাবে না, সব কিছু সময়মতো ব্যবহার করতে হবে, কাজ শেষ হলে ঘরের সমস্ত সুইচ বন্ধ করে রাখতে হবে। তাহলে কারেন্ট বিল কম আসবে। এগুলো করা সত্ত্বেও যদি কারেন্ট বিল বেশি আসে তাহলে বুঝতে হবে যে আপনার মিটারে সমস্যা আছে। এজন্য আপনাকে বিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে যোগাযোগ করতে হবে। তাহলে তারা আপনার মিটার ঠিক করে দিবে। কখনই অবৈধ উপায় অবলম্বন করে বিদ্যুৎ বিল কমানোর চেষ্টা করবেন না। এতে করে আপনার অনেক বড় ধরনের ক্ষতি হবার সম্ভাবনা থাকবে। 

শেষ কথাঃ কারেন্ট বিল বের করার সঠিক নিয়মসমূহ

এই পোস্টটি অনেক ধৈর্য ধরে পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। আশা করি এই পোস্টটি পড়ে আপনি অনেক উপকৃত হয়েছেন। আপনি যদি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অন্যকেও এই পোস্টটি পড়ার সুযোগ করে দিন। আপনার মতো তারাও যেন তাদের বাড়ির কারেন্ট বিল বের করতে পারে। এরকম আরো নতুন নতুন আপডেট পোস্ট পেতে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি ফলো করে রাখবেন। আবারো আপনাকে অনেক ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় নিচ্ছি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

পি এম ড্রিম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url