বাংলা আর্টিকেল লিখার নিয়ম ২০২৫

আমরা অনেকেই বাংলা আর্টিকেল লিখতে ভালোবাসি কিন্তু বুঝতে পারছি না যে কিভাবে শুরু করব, কোথায় থেকে শুরু করব, আর্টিকেলে কোন কোন বিষয় উল্লেখ করব, কেমন আর্টিকেল লিখলে গুগলে ভালো র‍্যাঙ্ক করতে পারব, কিভাবে এস ই ও ফ্রেন্ডলি আর্টিকেল লিখব, কেমন ধরনের কিওয়ার্ড পছন্দ করব, কেমন ভাষা ব্যবহার করব। এই সব কিছু আমি আপনাদের সাথে আজকে সহভাগিতা করব। আশা করছি এই "বাংলা আর্টিকেল লিখার নিয়ম" পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়বেন। তাহলে চলুন শুরু করা যাক- 

প্রতিটা বিষয় শুরু করার পূর্বে সকলেরই একটি পরিকল্পনা থাকে, যাকে কেন্দ্র করে মানুষ তার সমস্ত কাজ বাস্তবায়ন করে থাকে। ঠিক তেমনি আপনার আর্টিকেল লিখার শুরুতে আপনাকে একটি সুন্দর ভূমিকা লিখতে হবে। যার মাধ্যমে পাঠক বুঝতে পারবে সম্পূর্ণ আর্টিকেলে কোন কোন বিষয়কে কেন্দ্র করে লিখা হয়েছে। অর্থাৎ আপনি মনে করেন যে একটি আর্টিকেল লিখবেন "অনলাইনে টাকা ইনকাম করার উপায়" এই বিষয়ে। তাহলে শুরুতেই আপনাকে সংক্ষিপ্ত আকারে একটি সারমর্ম লিখতে হবে। যেমন কিভাবে অনলাইনে আয় করবেন? কি কি কাজ জানতে হবে অনলাইনে টাকা ইনকামের জন্য? কিভাবে ইনকাম করা টাকা উত্তোলন করবেন? কত ঘন্টা করে সময় দিতে হবে? মাসে কত টাকা পর্যন্ত ইনকাম করা যাবে? ইত্যাদি ইত্যাদি। এগুলোই আপনার ভূমিকাতে লিখতে হবে। 


আর্টিকেলে কেমন ধরনের ভাষা ব্যবহার করবেন?

বাংলা আর্টিকেল লিখার সময় অবশ্যই আপনাকে আপনার পাঠকদের সন্মান জানিয়ে লিখতে হবে। আপনার প্রতিটা আর্টিকেলে আপনি আমি শব্দের ব্যবহার থাকতে হবে যাতে করে আপনার পাঠক আপনার আর্টিকেলটি পড়ার সময় মনে করেন যে আপনি তার সাথে গল্প করছেন। এই শব্দগুলো ব্যবহার করলে পাঠকগণ আর্টিকেল পড়ে আনন্দ পায়। এছাড়াও আপনার পাঠক যেন আপনার আর্টিকেল পড়ে তার সমস্ত আশা আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারে। আপনার আর্টিকেলে সুন্দর, সাবলীল, মার্জিত ভাষা ব্যবহার করবেন যেন পাঠকরা আপনার আর্টিকেলটি পড়ে সন্তুষ্ট হতে পারে। এবং সবচেয়ে বড় আর গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আপনার আর্টিকেলের লিখাগুলো অবশ্যই যেন জাস্টিফাই থাকে। জাস্টিফাই থাকলে লিখাগুলো সব সুন্দর করে সাজানো থাকে। দেখতে অনেকটা বইয়ের মতো লাগে। লিখাগুলো যখন বইয়ের লিখার মতো থাকবে তখন পাঠক আর্টিকেল গুলো পড়তে আরো আগ্রহী হবে। তাই এটি করা বাঞ্ছনীয়।

আর্টিকেলে কেমন ছবি ব্যবহার করবেন?

আর্টিকেল এ বিভিন্ন ভাবে ছবি দেওয়া যায়। ব্লগারে চার ভাবে ছবি আপলোড করা যায়। আমরা অনেকে ছবির লিঙ্ক ব্যবহার করে ছবি আপলোড করে থাকি যা করা উচিৎ নয়। কারণ মনে করেন আপনি আমার ওয়েবসাইটের একটি ছবির লিঙ্ক কপি করে আপনার ওয়েবসাইটে লিঙ্কিং করে দিলেন। কিছুদিন পরে আমি চিন্তা করলাম যে আমার এই ছবিটা আর দরকার নাই অর্থাৎ আমি নতুন ছবি আপলোড করতে চাচ্ছি। এজন্য আমি আগের ছবি ডিলিট করে নতুন ছবি আপলোড করলাম। তখন আপনার ওয়েবসাইট থেকে ওই ছবিটা হারিয়ে যাবে। তখন ঐ ছবিটা আপনি আর আপনার ওয়েবসাইটে ব্যবহার করতে পারবেন না। আবার অন্যের ছবি ব্যবহার করলে আপনার ওয়েবসাইটে কপিরাইট ইস্যুও আস্তে পারে। তাই ছবি গুগল থেকে ডাউনলোড করতে হবে যেগুলো ক্রিয়েটিভ কমন লাইসেন্স দেওয়া আছে সেগুলো। ডাউনলোড করার পর আপনি আপনার ওয়েবসাইটে  ছবিটি ব্যবহার করবেন।

আরো পড়ুনঃ ফ্রিল্যান্সিং কি? ফ্রিল্যান্সিং জগতে সবচেয়ে জনপ্রিয় সেক্টর কোনটি এবং কেন? 

আবার অনেক সময় আমরা স্ক্রিনশট তুলে ওয়েবসাইটে ছবি আপলোড করে থাকি যেগুলো দেখতে খুবই বাজে লাগে। কারণ আমরা পুরা স্ক্রিনের স্ক্রিনশট নিয়ে তা আপলোড করি। এটি করা কোনক্রমেই উচিৎ নয়। আপনি যখন স্ক্রিনশট নিবেন তখন যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই নিবেন বাড়তি অংশ দেখানোর কোনো প্রয়োজন নেই। তাহলে স্ক্রিনশট দেওয়া ছবি গুলো দেখতে ভালো লাগবে। আর ছবি যখন দিবেন তখন অবশ্যই আর্টিকেলের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছবি দিবেন যাতে করে পাঠকরা ছবি দেখেও কিছু বুঝতে পারে। 

সূচিপত্র তৈরি 

আপনার ব্লগের প্রতিটা আর্টিকেলে একটি করে সূচিপত্র তৈরি করতে হবে। কারণ সূচিপত্রের মাদ্ধমে আপনার পাঠকরা জানতে পারবে যে আপনার আর্টিকেলে আপনি কি কি বিষয় নিয়ে আলোচনা করছেন। পাঠক যখন আপনার পোস্টে সূচিপত্র দেখবে তখন তারা তাদের প্রয়োজনীয় বিষয় খুব দ্রুত খুঁজে পাবে এবং পড়বে। এতে করে একটি পাঠক আপনার ওয়েবসাইটের প্রেমে পড়ে যাবে তখন সেই পাঠক আপনার ওয়েবসাইটে প্রায় নতুন কিছু পড়ার জন্য ভিজিট করবে। সুতরাং পাঠকদেরকে আকৃষ্ট করার জন্য এই সূচিপত্র তৈরি করা উচিৎ।

আরো পড়ুন সেকশন তৈরি করা 

আপনার প্রতিটা আর্টিকেলের মধ্যে আরো পড়ুন সেকশন তৈরি করে রাখতে হবে। এই আরো পড়ুন সেকশনে আপনাকে অন্য পোস্টের লিঙ্ক দিতে হবে যাতে করে আপনার পাঠকরা তাদের প্রয়োজনীয় সমস্ত তথ্য আপনার ওয়েবসাইট থেকে বিস্তারিত জানতে পারে। এই সেকশনটি আপনার আর্টিকেলের মধ্যে রাখলে পাঠকগণ আপনার ওয়েবসাইটে অনেক সময় ধরে অবস্থান করবে এতে করে আপনার ওয়েবসাইট থেকে আপনার ইনকাম বৃদ্ধি পেতে থাকবে। এজন্য এই আপনার প্রতিটা আর্টিকেলে আরো পড়ুন সেকশন রাখা অতিব জরুরী। 

আর্টিকেলে আকর্ষণীয় লিঙ্ক বাটন যুক্ত করা 

আপনার আর্টিকেলের মাঝে মাঝে কয়েকটি আকর্ষণীয় বাটন তৈরি করতে হবে এবং সেখানে আপনার অন্য পোস্টের লিঙ্ক দিতে হবে। এই বাটন গুলোতে অবশ্যই পোস্টের সাথে মিল আছে এমন অন্য আর একটি পোস্টের লিঙ্ক যুক্ত করবেন। তাহলে এই বাটন গুলো দেখে আপনার ওয়েবসাইটের পাঠকরা আকর্ষিত হবে এবং সেই বাটনে চাপ দিয়ে নতুন পোস্ট পড়তে পারবে। এই বাটন গুলো দিলে পাঠকদের সময় বেঁচে যায়। তারা সহজেই তাদের পছন্দের পোস্টটি পড়তে পারে এজন্য এই বাটন গুলোরও প্রয়োজন রয়েছে। 

এতক্ষণ আপনাদের সাথে যেগুলো বিষয় শেয়ার করলাম সেগুলো আসলে বেসিক নিয়ম ছিল। উপরিউক্ত নিয়মগুলো অনুসরণ করে আপনাকে প্রথমে একটি আর্টিকেল লিখতে হবে। তারপর আপনাকে সেটি এডিট করে SEO ফ্রেন্ডলি করে তুলতে হবে। যেন আপনার মূল্যবান পোস্টটি গুগলের প্রথম পেজে র‍্যাঙ্ক করে। তাহলে চলুন শুরু করা যাক। আপনি আপনার আর্টিকেলকে কিভাবে SEO ফ্রেন্ডলি করবেন তার নিয়মাবলী সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলো-

কিওয়ার্ড কি? 

আর্টিকেল লিখার সর্বপ্রথম শর্ত হলো একটি মানসম্মত একটি টাইটেল বা বিষয় পছন্দ করা। কারণ আপনি যদি একটি বিষয় নির্বাচন করতে না পারেন তাহলে কিভাবে কি লিখবেন তা ভেবেই পাবেন না আর মানুষ আপনার এই অমূল্যবান আর্টিকেল পড়বেও না। তাই আপনার উচিৎ একটি ভালো ফোকাশ কিওয়ার্ড নির্বাচন করা। এখন আপনাদের মনে প্রশ্ন আস্তে পারে যে ফোকাশ কিওয়ার্ড আবার কি? খাই না মাথায় দেয়? আসুন বিষয়টা আপনাকে পরিষ্কার করে দেই। ফোকাস কিওয়ার্ড হলো এমন একটি কিওয়ার্ড যেটির মাধ্যমে পাঠকগণ আপনার এই মূল্যবান আর্টিকেলকে গুগলে লিখে খুঁজে বের করবে। যেমন মনে করুন আপনি এইচ এস সি পরীক্ষার্থী। আপনার সামনে পরীক্ষা তাই আপনার পরীক্ষার একটি রুটিন দরকার। তাহলে আপনি অনলাইন থেকে ডাউনলোড করতে গেলে আপনাকে অবশ্যই গুগলে সার্চ করবেন যে- "এইচ এস সি পরীক্ষার রুটিন ২০২৫" তাই না। এটিই হলো আপনার আর্টিকেলের ফোকাশ কিওয়ার্ড। এই ফোকাশ কিওয়ার্ড আপনার আর্টিকেলের মধ্যে প্রায় দশ থেকে পনের জায়গায় দিতে হবে। অর্থাৎ আপনার এই ফোকাশ কিওয়ার্ড আপনার আর্টিকেলের পারমালিঙ্কে, টাইটেলে, হেডিংএ, মেটা ডেসক্রিপশন সহ বিভিন্ন জায়গায় ব্যবহার করতে হবে। তাহলে পাঠকগণ যখনি "এইচ এস সি পরীক্ষার রুটিন ২০২৫" গুগলে লিখে সার্চ করবে তখনি আপনার এই পোস্টটি গুগলের প্রথম পেজে দেখাবে। তাই কিওয়ার্ড নির্বাচনের সময় আপনাকে একটু গভীর ভাবে চিন্তা করতে হবে যে মানুষ কোনো একটি বিষয় খুঁজে পাওয়ার জন্য গুগলে কি লিখে সার্চ দেয়। আবার শুধু এটি দেখলেই হবে না সেই সাথে আপনাকে দেখতে হবে  আপনি যেই কিওয়ার্ড নির্বাচন করেছেন তার গুগল সার্চ রেজাল্ট কত আছে ইত্যাদি। অর্থাৎ সব দিক বিবেচনা করে আপনাকে একটি কিওয়ার্ড নির্বাচন করতে হবে। কারণ কিওয়ার্ডকে একটি আর্টিকেলের প্রাণ বলা হয়।

হেডিং ট্যাগ এর ব্যবহার 

আপনার আর্টিকেলে অবশ্যই হেডিং ট্যাগ এর ব্যবহার থাকতে হবে। কারণ এই হেডিং ট্যাগই আপনার আর্টিকেলকে গুগলে র‍্যাঙ্ক করতে সাহায্য করবে। হেডিং ট্যাগ সাধারণত ছয় ধরণের হয়ে থাকে। যেমন H1.H2,H3,H4,H5 এবং H6 । তবে H1, H2 এবং H3 ট্যাগ আর্টিকেলে বেশি ব্যবহৃত হয়। H1 ট্যাগ হলো সবচেয়ে বড় আকারের লিখা হয়ে থাকে আর H6 ট্যাগ সবচেয়ে ছোট আকারের হয়ে থাকে। এই হেডিং ট্যাগগুলো আপনাকে আপনার আর্টিকেলে অনেক যত্নের সহিত ব্যবহার করতে হবে। 

ছবি এস ই ও করা 

আপনি আপনার ওয়েবসাইটে যে ছবি বা স্ক্রিনশটের ছবি আপলোড করবেন তাতে আপনি যে আর্টিকেল লিখেছেন সেই আর্টিকেলের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ছবির নাম দিতে হবে তাহলে গুগল বুঝতে পারবে যে আপনার ওয়েবসাইটের ছবি কোন গুলো। এই পদ্ধতি অবলম্বন করলে আপনার ওয়েবসাইটের ছবিও গুগলে র‍্যাঙ্ক করবে। 

উপসংহার 

আমরা সকলেই জানি যে প্রতিটা জিনিষের শুরু এবং শেষ আছে। তেমনি প্রত্যেকটা আর্টিকেলেরও শেষ আছে। এখন প্রশ্ন হলো যে- এই উপসংহারে আপনি কি লিখবেন? শেষে আপনাকে আপনার আর্টিকেল সম্পর্কে আপনার নিজের মতামত পোষণ করবেন। কোনো পরামর্শ কেউ দিতে চাইলে সেটার গুরুত্ব দিতে হবে। এতে করে আপনার পাঠকগণ আপনার প্রতি বিশ্বস্ত হবে। তারা আপনার উপর আস্থা রাখবে। 

উপরের পয়েন্টগুলো পড়ে আপনারা অনেক উপকৃত হয়েছেন বলে আমি মনে করছি। আপনার যদি এই পোস্টের বিষয়ে কোনো কিছু বলার থাকে বা কোনো পরামর্শ থাকে তাহলে ইমেইলের মাধ্যমে অথবা নিচের কমেন্টের মাধ্যমে নির্ভয়ে জানাতে পারেন। এই পোস্টটি ধৈর্য সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। আরো নতুন নতুন তথ্য পেতে সর্বদা আমাদের এই "PM DREAM IT" আইটির সাথেই থাকুন।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

পি এম ড্রিম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url