চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার
আপনি কি আপনার চুল নিয়ে অনেক চিন্তায় আছেন? ভাবছেন যে কিভাবে আপনার চুল সুন্দর ও
বৃদ্ধি করবেন? আপনার সকল সমস্যার সমাধান পাবেন আমাদের এই আর্টিকেলের মধ্যে।
আমাদের আর্টিকেলের মধ্যে আপনি জানতে পারবেন যে কি করলে আপনার চুল ভালো থাকবে,
আপনার চুল দ্রুত বৃদ্ধি করতে আপনি কি ব্যবহার করবেন, কি কি উপকার পাবেন তার সমস্ত
কিছুই আপনি এই আর্টিকেলের মধ্যে জানতে পারবেন। তাহলে চলুন আর বেশি কথা না বলে আসল
বিষয়ে আলোচনা শুরু করা যাক।
পোস্ট সূচিপত্রঃ চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার
-
চুলের যত্নে কারি পাতা ব্যবহারবিধি
-
চুলের যত্নে নারিকেল তেল ও কারি পাতা
-
চুল বৃদ্ধিতে কারিপাতার ব্যবহার
-
চুলের যত্নে কারি পাতা ও জবা ফুল
-
চুলের যত্নে কারি পাতা ব্যবহারের উপকারিতা
- চুল পাকা কমায়
- চুল ঝলমল করতে
- চুল পড়া কমায়
- খুশকি দূর করতে
- চুল বৃদ্ধিতে
-
কারি পাতা ব্যবহারে সতর্কতা
-
শেষ কথাঃ চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার
চুলের যত্নে কারি পাতা ব্যবহারবিধি
অনেক প্রাচীন কাল থেকেই মানুষ এই চুলের সমস্যাই ভুগছে। আগে মানুষের কোনো
সমস্যা হলে তারা নিজেরাই তাদের সমস্যা সমাধান করত। এর জন্য কারো প্রয়োজন ছিল
না। তারা নিজের মত বিভিন্ন ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করত। তাদের এই ব্যবহারবিধিগুলো
বর্তমানেও অনেক কার্যকর ভূমিকা পালন করে। চুলের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের তেমনি
এক ঔষুধি গুণের নাম হলো কারি পাতা। চুলের যতরকম সমস্যা রয়েছে তার সকল সমাধান
রয়েছে এই কারি পাতার মধ্যে। আপনার চুলের সমস্যা সমাধান করতে এই কারি পাতা কি কি
ভাবে ব্যবহার করবেন তা আপনাদের সামনে তুলে ধরা হলোঃ
চুলের যত্নে নারিকেল তেল ও কারি পাতা
আপনার চুলে যদি অনেক সমস্যা থেকে থাকে। যেমন-অতিরিক্ত চুল পড়া, চুলের আগা ফাটা
ভাব থাকলে আপনি এই হেয়ার টনিকটি ব্যবহার করতে পারেন। এই হেয়ার টনিক ব্যবহার
করলে আপনার চুল হবে ঘন, কালো, মজবুত ও শক্তিশালী। এই হেয়ার টনিক তৈরি করতে
দুইটি জিনিস দরকার হবে এক হলো নিজের প্রয়োজন মত নারিকেল তেল এবং দুই হলো কারি
পাতা ১০ থেকে ১২ টি।
আরো পড়ুনঃ
বাংলা আর্টিকেল লিখার নিয়ম ২০২৫
এই দুইটি উপাদান হলেই আপনি আপনার চুলের জন্য এই স্পেশাল হেয়ার টনিক তৈরি করে
ব্যবহার করতে পারবেন। এটি তৈরি করার জন্য আপনাকে প্রথমে একটি পরিষ্কার পাত্র
নিতে হবে। পাত্রে প্রয়োজনমত নারিকেল তেল অর্থাৎ এক জনের জন্য ৫ থেকে ৬ চামুচ
নিবেন এবং কারি পাতা ১০ থেকে ১২টি তেলের সঙ্গে মিশিয়ে দিবেন। তারপর এটিতে তাপ
দিতে থাকুন। যখন দেখবেন যে কারি পাতার চারপাশের রং কালো বর্ণ ধারণ করেছে তখন
চুলার আচ বন্ধ করে দিবেন।
তারপর মিশ্রণটিকে একটু ঠাণ্ডা হতে দিন। ঠাণ্ডা হয়ে গেলে পরিষ্কার কাপড় বা
যদি আপনার ঘরে ছাঁকনি থাকে তাহলে সেটি দিয়ে ছেঁকে তেলগুলো একটি পরিষ্কার
পাত্রে নিন। ছেঁকে নেওয়া হলে সেটি আপনার চুলে লাগাতে পারেন। চুলে লাগানোর সময়
একবারে চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত আস্তে আস্তে মাখাতে থাকুন। পুরা চুলে
মাখানো হয়ে গেলে প্রায় এক ঘন্টার মত আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে। এক ঘন্টা পর
শ্যাম্পু দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। এই হেয়ার টনিকটি আপনি যদি সপ্তাহে দুই
বার ব্যবহার করেন তাহলে আপনি খুব ভালো ফলাফল পাবেন।
চুল বৃদ্ধিতে কারিপাতার ব্যবহার
আপনার চুল যদি কোনো সমস্যার কারণে লম্বা না হয় তাহলে আপনি এই কারিপাতার
ব্যবহার করতে পারেন। আমরা অনেকেই চায় ঘন লম্বা কালো ও মজবুত চুল। কিন্তু আমরা
অনেকেই জানিনা যে চুল বড় করতে হলে আমাদেরকে কি ব্যবহার করতে হবে বা যদি জেনেও
থাকি যে কারিপাতা ব্যবহার করে চুল বড় করা যায় কিন্তু আমরা এটা জানিনা যে
কারিপাতা কিভাবে সঠিক উপায়ে ব্যবহার করতে হয়। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক যে
এর আয়ুর্বেদিক উপায়টি কি এবং কিভাবে তৈরি করবেন এবং কিভাবে ব্যবহার করবেন। এর
জন্য আপনাকে একটু ভিন্ন ভাবে একটি হেয়ার টনিক বানাতে হবে।
এই হেয়ার টনিকটি বানাতে হলে আপনার যা যা দরকার হবে তা হলো- বিটের খোসা, এক
টুকরো আদা, আমলকী,এক মুঠ কারি পাতা ও পানি। এর জন্য আপনাকে প্রথমে বিটের খোসা
ছাড়িয়ে নিতে হবে এবং টুকরো টুকরো করে কেটে নিতে হবে এর সাথে কয়েকটি আমলকী, এক
টুকরো আদা, এক মুঠ কারি পাতা ও পরিমাণ মত পানি নিতে হবে। তারপর এটিকে
ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করুন অথবা সিলপাটাতে বেঁটে নিন। এটিকে একবারে পেস্ট এর
মতো করে ফেলুন। পানি দেওয়ার ব্যপারে একটু সতর্ক থাকবেন। কারণ পানি বেশি হয়ে
গেলে এটি পেস্ট এর আকার ধারণ করবে না।
আরো পড়ুনঃ স্মার্ট ফোনে কিভাবে কনফারেন্স কল করবেন?
পেস্টের মতো হয়ে গেলে এটি থেকে ছেঁকে রস বের করে নিন। এই রসটিই আপনার চুলে
ভালো করে মাখিয়ে নিন। এটি মাখার পর এক ঘন্টা অপেক্ষা করুন এবং শ্যাম্পু দিয়ে
ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। এই হেয়ার টনিকটি সপ্তাহে দুই বার ব্যবহার করুন তাহলে
দেখবেন আপনার চুল খুব দ্রুত বড় হবে। এর সাথে সাথে আপনার চুলের গোড়া শক্ত ও
মজবুত হবে এবং চুল পড়া বন্ধ হবে।
চুলের যত্নে কারি পাতা ও জবা ফুল
চুলের যত্নে কারি পাতা ও জবা ফুলের হেয়ার টনিকও বেশ কার্যকরী একটি
আয়ুর্বেদিক নির্যাস যা ব্যবহার করলে আপনার চুল হবে সতেজ ও খুবই সিল্কি। এই
হেয়ার টনিক তৈরির জন্য আপনার লাগবে এক মুঠ জবা ফুল ও কারিপাতা। এর সাথে
প্রয়োজন মত পানি মিশিয়ে এটিকে ব্লেন্ডারে অথবা সিলপাটাতে বেঁটে পেস্ট তৈরি
করুন।
এটি ব্যবহারের উত্তম সময় হলো যখন গোসল করবেন তার এক ঘন্টা আগে ভাল করে চুলে
মাখিয়ে নিন। একবারে চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত মাখানোর পর ৪০ মিনিট থেকে ১
ঘন্টা অপেক্ষা করে ভালো করে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে দুই তিন দিন পর
পর ব্যবহার করলে আপনার চুল আগের তুলনাই অনেক ঘন হবে ও চুল পড়া বন্ধ হয়ে
যাবে।
ঠিক একই নিয়মে আপনি আরো কিছু উপাদান দিয়ে আপনি আপনার চুলের জন্য একটি ভালো
মানের আয়ুর্বেদিক নির্যাস তৈরি করে আপনার চুলে ম্যাসাজ করতে পারেন। এতে করে
আপনার চুল নিয়ে আপনাকে আর কোনো চিন্তা করতে হবে না। আমরা এই ঘরোয়া উপায়ের আরো
কিছু টিপস এবং ট্রিক্স দিচ্ছি যেন আপনি আপনার হাতের কাছে যে সমস্ত জিনিস
সচরাচর পাওয়া যায় সেই সমস্ত জিনিস দিয়েই আপনার কাঙ্ক্ষিত নির্যাসটি
তৈরি করে ব্যবহার করতে পারেন। একি উপায়ে যে সমস্ত হেয়ার টনিক তৈরি করতে
পারবেন সেগুলো হলো-
১.মেথিপাতা, আমলকী ও কারিপাতা
২.পেঁয়াজ
ও কারিপাতা
৩.কারিপাতা ও টকদই
চুলের যত্নে কারি পাতা ব্যবহারের উপকারিতা
কারি পাতা হলো একটি প্রাকৃতিক উপাদান যার মধ্যে কনো ভেজাল নেই। এই কারি
পাতার মধ্যে কোনো রাসায়নিক পদার্থ নেই। যার ফলে আপনার কোনো ভয়েরও কারণ নেই।
আপনি নির্দ্বিধায় এই কারি পাতা আপনার চুলের দূরবলতাকে চিরদিনের জন্য বিদায়
করে দিতে পারেন। আপনি এই কারি পাতায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও বি। এবং
সবচেয়ে যেটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে সেটা হলো প্রোটিন ও
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আপনার চুলকে সতেজ রাখতে সাহায্য করে। কারণ এই উপাদানের
সাহায্যে আপনার স্ক্যাল্পে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পাবে। এছাড়াও এই কারি পাতায়
অ্যামিনো নামে একটি এসিড পাওয়া যায় যা চুলের সিল্কি ভাব ধরে রাখতে সাহায্য
করে।
আপনি এই কারিপাতা ব্যবহার করে যে যে উপকার পাবেন তা নিচে ব্যাখ্যা করা
হলোঃ
চুল বৃদ্ধিতে সাহায্য করেঃ এই কারি পাতা ব্যবহার করলে আপনার চুল আগের থেকে
অনেক বৃদ্ধি পাবে। অর্থাৎ আপনার চুল ঘন হবে, নতুন চুল গজাবে। কারণ আগেই আমরা
জেনেছি যে কারি পাতায় প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন বি ও প্রোটিন,
অ্যান্টাঅক্সিডেন্ট আছে যা আপনার ত্বকের রক্ত সঞ্চালন অনেক গুণে বাড়িয়ে দেয়।
এর ফলে আপনার নতুন চুল সহজেই গজাবে। নিয়ম মেনে ব্যবহার করে দেখুন ফলাফল আপনি
নিজেই দেখতে পাবেন।
খুশকি দূর করতেঃ শীতকাল আসলেই আমরা অনেক টেনশনে পড়ে যায় আমাদের চুল
নিয়ে। কারণ শীতকাল আসলেই অনেকের মাথায় অনেক খুশকিতে ভরে থাকে এবং মাথা
চুলকাতে থাকে। এই খুশকির জন্য অনেক সময় অনেক চুলও পড়ে। এই বড় ধরনের সমস্যা
সমধানের একমাত্র ঔষধ হলো এই কারি পাতা। উপরে উল্লেখিত একটি হেয়ার টনিক তৈরি
করে আপনার মাথায় ভালো ভাবে ম্যাসাজ করে দিন তাহলেই দেখবেন এই কারি পাতার
ম্যাজিক।
চুল ঝলমল করতেঃ আমাদের অনেকের চুল অনেক শুষ্ক, ফাটাফাটা ভাব থাকে। এই
ধরনের সমস্যা দূর করার জন্য আপনার কাছে যদি অন্য কোনো উপাদান না থাকে তাহলে
শুধুমাত্র এই কারি পাতা বেঁটে আপনার চুলে মেখে নিন এবং ৩০ থেকে ৪০ মিনিট পর
শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। তাহলেই দেখবেন আপনার চুল সুন্দর ঝলমলে হয়ে
উঠছে।
আরো পড়ুনঃ ওয়ার্ক আপ জব বাংলাদেশ
চুল পড়া কমায়ঃ অনেক সময় আমাদের কোনো না কোনো কারণের জন্য অনেক চুল
পড়তে থাকে। অনেক ডাক্তারি ঔষুধ সেবন করেও কোনো সফলতা পাননি। তাদের জন্য এই
কারি পাতায় হলো সেরা ঔষুধ হবে। আপনি শুধু কারি পাতার সাথে পেঁয়াজের রস মিশিয়ে
পেস্ট তৈরি করে ব্যবহার করে দেখেন। দুই থেকে তিনবার ব্যবহার করলেই আপনার চুল
পড়া বন্ধ হয়ে যাবে।
চুল পাকা কমায়ঃ আমরা আমাদের চারপাশে অনেক মানুষদের দেখি যাদের অল্প
বয়সে চুল পাকা শুরু করে। তাদের চুল পাকা কমানোর জন্য এই কারি পাতা অনেক
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। যাদের এ ধরনের সমস্যা আছে তারা সামান্য
কারি পাতার সাথে পেঁয়াজের রস মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে ব্যবহার করতে পারেন। এতে
আপনার চুল পাকা অনেকাংশে কমে যাবে।
কারি পাতা ব্যবহারে সতর্কতা
কারি পাতা ব্যবহারে আপনাকে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। না হলে বিপদ
হওয়ার সম্ভাবনা আছে। কারণ যখন আপনি কারি পাতার বিভিন্ন হেয়ার টনিক তৈরি করবেন
তখন আপনাকে অনেক সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। না হলে তেল ছিটকে গায়ে পড়তে পারে
আবার আপনি যদি চুলাতে করে থাকেন তাহলে আগুনের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। তা না
হলে যেকোনো বিপদ হতে পারে।
শেষ কথাঃ চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার
এই কারি পাতার গুড়া একদম প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি করা হয়ে থাকে। এর মধ্যে কোনো
রাসায়নিক পদার্থ থাকে না। যার কারণে আপনি এটি নির্ভয়ে ব্যবহার করতে পারেন।
এটিতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি ও অ্যান্টাঅক্সিডেন্ট থাকে যার ফলে এটি অনেক
কার্যকরী হয়। এই কারি পাতা যদি আপনি নিয়মিত ব্যবহার করেন তাহলে আপনি এর ফলাফল
নিজ চোখে দেখতে পাবেন। তাই চুল যদি ভালো রাখতে চান তাহলে আজ থেকেই
আপনার চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার করা শুরু করে দিন।
অনেক ধৈর্য ধরে আমাদের এই মূল্যবান পোস্টটা পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য
ধন্যবাদ।"PM DREAM IT" সম্পর্কে যদি আপনার কোনো পরামর্শ, মতামত বা কোনো
অভিযোগ থেকে থাকে তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে তা জানাতে পারেন।
পি এম ড্রিম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url